সতেরো বছরের রেমিটেন্স যোদ্ধা নাসির উদ্দীন। বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপে। সৌদি থেকে শূন্য হাতে দেশে ফিরেছেন গতরাত ১.৩০ মিনিটে। নাসির উদ্দীনকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি পরিবার। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে ঠাঁই ব্র্যাকের সেইফ হোমে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বিমানবন্দরে এপিবিএন অফিসে যাওয়ার পর দেখা যায় চেয়ারে মাথা নিচু করে রেমিটেন্স যোদ্ধা নাসির উদ্দীন বসে আছেন। ‘বাবা’ বলে ডাকতেই তিনি চোখ তুলে তাকান। তার চোখ ভেজা। তিনি কাঁদছেন।
ঢাকায় থাকা তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে কেউ তাকে গ্রহণ করছে না। অথচ গত ১৭ বছর তিনি তাদের জন্য বিদেশে খেটেছেন।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, বয়োবৃদ্ধ এই কর্মী ২০১৪ সাল পর্যন্ত বৈধ হিসেবে কাজ করেছেন। পরে আকামার মেয়াদ বাড়ানো যায়নি বলে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন। সর্বশেষ গত ১৮ দিন জেল খেটে দেশে ফিরে আসেন। তার স্ত্রীর সঙ্গে বয়সের ব্যবধান অস্বাভাবিক। কয়েক বছর আগ থেকেই তিনি তার স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পারেন।
সর্বশেষ গত কয়েক মাসে করোনার কারণে তিনি টাকা পাঠাতে পারেননি। এর ফলে তার স্ত্রী তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তার সব অর্থ সম্পদও স্ত্রীর জিম্মায় রয়ে যায়। তার দুই সন্তানের এখনো বয়স কম। ফলে তিনি এখন সম্পূর্ণ নিরুপায় হয়ে সন্দ্বীপে তার বোনের আশ্রয়ে যাবার কথা ভাবছেন। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার ভাড়াও তার কাছে নেই।
বিপর্যস্ত মন আর বিধ্বস্ত ও ক্লান্ত শরীর নিয়ে তিনি তাই বসে ছিলেন এয়ারপোর্টে। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে যাবতীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাসে তিনি কিছুটা উজ্জীবিত হন। ব্র্যাকের সেইফ হোমে যেতে রাজি হন। এরপর এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্র্যাকের কাছে হস্তান্তর করেন সকালেই। নেওয়া হয় সেইফ হোমে।
সাংবাদিকের বর্ণনায় সেখান খানিক বিশ্রাম নেয়ার কথা বলে সকাল ১০ টায় ঘুমাতে যান তিনি। দুপুরে ওঠেননি। সন্ধ্যায়ও তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দেহ-মনের উপর বয়ে যাওয়া অসহনীয় ধকল কাটানোর জন্য প্রাইমারি এইড হচ্ছে এই ঘুম। স্বল্প কিন্তু ভীষণ কার্যকর এই সেবা ঠিক করে দেয়, কতটা মসৃণ হবে অপেক্ষমাণ বিদেশ ফেরত জীবন। অথচ কোথাও কেউ নেই। কঠিন এই দুঃসময়ে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামই এইসব কর্মীদের একমাত্র সহায়-অবলম্বন। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের ভেঙে পড়া স্বপ্ন আর জীবনের শেষ আশ্রয় হিসেবে কাজ করছে এই প্রোগ্রাম। নাসির উদ্দীন বর্তমানে ব্র্যাকের সেইফ হোমে অবস্থান করছেন।
0 মন্তব্যসমূহ