টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গোপালপুর উপজেলা। আর এ উপজেলা সদর থেকে সাত কিলো পশ্চিমে ঝিনাই নদীর তীরে দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রাম। এ গ্রামের নদী তীর ঘেঁষে ১৫ বিঘা জমির উপর নির্মিত হয়েছে ২০১ গম্বুজ মসজিদ।
কী থাকছে মসজিদে :
নতুন ও আনকোরা বৈশিষ্ট্য এবং চমৎকারিত্ব নিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ মসজিদ। মসজিদের উল্লেখযোগ্য ও ব্যতিক্রর্মী স্থাপত্য অনুষঙ্গ হচ্ছে ২০১ গম্বুজ। পৃথিবীর কোন মসজিদেই এতো গম্বুজ নেই। মসজিদের ছাদের মাঝখানে রয়েছে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি বড় গম্বুজ। আর চার পাশে সমদূরত্বে ১৭ ফুট উচ্চতায় আরো ২০০ গম্বুজ। পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ গম্বুজ দক্ষিণ ভারতের বিজাপুরে।
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে, বিজাপুরের শাসক আদিল শাহের সমাধি সৌধে, ১০৩ ফুট উচ্চতার এ গম্বুজ নির্মিত হয়। নাম গোল গম্বুজ। অপরটি হলো উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক নির্মিত মসজিদুল আকসা চত্বরের কুব্বাতুস সাখরা বা ডম অব দ্যা রক। এটির উচ্চতা ১২৬ ফুট। এ দুটি ইমারত হলেও মসজিদ স্থাপত্য নয়।
২০১ গম্বুজ মসজিদের আরেকটি ব্যতিক্রম বিষয় হলো মিনার। আজান প্রচারে ৪৫১ ফিট উচ্চতার নান্দনিক মিনার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মসজিদের মর্যাদায় ভূষিত করেছে। পৃথিবীর কোনো মসজিদেই এতো উঁচু মিনার নেই। নামকরণ করা হয়েছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মিনার’। নির্মাণের পূর্বে ঢাকার কুর্মিটোলার সিভিল এভিয়েশন অথরিটি থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও মসজিদের চারকোনায় ১১৫ ফুট উচ্চতার চারটি এবং ৮১ ফুট উচ্চতার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের আরও চারটি মিনার ইমারতের অবয়বকে চিত্তাকর্ষক করে তুলেছে।
রফিকুল ইসলামের কনিষ্ঠ ভ্রাতা, মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক মো. হুমায়ুন কবির জানান, ১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪৪ ফুট প্রস্থ দ্বিতল মসজিদটিতে এক সঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে অত্যাধুনিক সুবিধা। মিহরাবের দুই পাশে লাশ রাখার জন্য হিমাগার নির্মাণ হচ্ছে। পুরো মসজিদ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
দেয়ালে টাইলসের উপরে পিতলে খোদাইকৃত ৩০ পারা পবিত্র কোরআন শরীফ অঙ্কিত থাকছে। এ জন্য ১২ টন পিতল ব্যবহার করা হয়েছে। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে তা পাঠ করতে পারেন। পূর্নাঙ্গ মসজিদের সবকটি উপাদান যেমন, মিম্বার, মিনার, মিহরাব, মাকসূরা, যিয়াদা, জুল্লাহ, রিওয়াক তো থাকছেই, সাথে ভেতরে খোদাই করা পাথরে বৈচিত্র্যময় নকসা, ফ্রেস্কোর নিপুণ ও ক্ষুদ্রকায় সন্নিবেশ, স্টাকো ও রঞ্জিত টালীর সফল প্রয়োগ এবং আরবি হরফের লিপি শৈলী অনন্য করে তুলছে। মসজিদের নকসা বাছাই করেছেন প্রতিষ্ঠাতা রফিকুল ইসলাম। পৃথিবীর সব বিখ্যাত মসজিদের নকসা সংমিশ্রিত করে ভিন্নধর্মী ডিজাইনে রূপান্তরিত হলেও এ মসজিদে সিরিয় ও মেসোপটেমীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
মসজিদের প্রবেশ পথ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে ৫ টন পিতল। পিতল পৃষ্ঠে গ্রন্থিত হচ্ছে ২৫ কেজি গোল্ডপ্লেট। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নির্মিত হচ্ছে দুটো পৃথক পাঁচতলা ভবন। সেখানে থাকবে দুস্থ নারীদের জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। মসজিদ পরিদর্শনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে নির্মিত হয়েছে দুটি হ্যালিপ্যাড। সাবেক ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান হেলিপ্যাডের উদ্বোধন করেন।
মসজিদ থেকে অনতিদূরে নির্মাণ হচ্ছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য অতিথিশালা। ঝিনাই নদীর তীর থেকে মসজিদ পর্যন্ত থাকছে টাইলসের সিঁড়ি। নদীর উপর নির্মিত হবে দৃষ্টিনন্দন সেতু। মসজিদের চারপাশে থাকবে দেশি-বিদেশি ফুলের বাগান। দেশি-বিদেশি পর্যটক, অলি-আউলিয়া ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আগমন ঘটবে বলে মনে করছেন এর উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীর পদভারে প্রকম্পিত হচ্ছে মসজিদ ক্যাম্পাস।
এ ইমারত নির্মাণ শুরু হয় ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রফিকুল ইসলামের মাতা, মরহুম রিজিয়া খাতুন। অবকাঠামোগত কাজ শেষে এখন চলছে ফিনিশিং। চার মাসের মধ্যে মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছে মসজিদ কমিটি।
মসজিদের টাইলস, মার্বেল ও দামি পাথরসহ ফিটিংস এর যাবতীয় পণ্য চীন ও ইতালি থেকে আমদানি করা হয়েছে। সরকার মসজিদ নির্মাণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক ও করা সমপূর্ণরূপে মওকুফ করেছে। নির্মাণ শৈলী ও সরঞ্জামে নিরাপত্তার দিকেও খেয়াল রাখা হয়েছে। মসজিদে ব্যবহৃত পাথর এমনভাবে ক্যামিকেলের প্রকেটশন দেয়া, যাতে বড় অগ্নিকাণ্ডেও মসজিদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না।
-ইত্তেফাক
0 মন্তব্যসমূহ