পদ্মা সেতুসহ বড় অবকাঠামো নির্মাণ ও অর্থায়নে এগিয়ে আসছে চীন। বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়াসহ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে চীনের তৎপরতাও দৃশ্যমান।
ভারত তার ঘনিষ্ট মিত্র বাংলাদেশে চীনের এসব তৎপরতার দিকে দৃষ্টি রাখছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত।
জানা গেছে, ভারত তার পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ সম্প্রসারণের দিকে নজর দিয়েছে। গত মাসেই চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে কলকাতা থেকে জাহাজে করে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহন করেছে ভারত।
দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, এই পরীক্ষামূলক জাহাজ চলাচলের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্য যোগাযোগ উন্নত হবে বলে ভারত সরকার আশা করছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় যোগাযোগ বাড়াতে আটটি রুট চিহ্নিত করা হচ্ছে। উভয় পক্ষই মনে করে, আকাশ, নৌ, রেল ও সড়কপথে যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে পারস্পরিক কল্যাণের স্বার্থে দুই দেশের মধ্যেই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সুযোগ বাড়বে।
গত বছর দুই দেশ ভারত থেকে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল থেকে পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) চূড়ান্ত করে। এতে নৌ, রেল, সড়ক বা বহুমুখী মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে ভারতের ওই অঞ্চলে পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে চিহ্নিত আটটি রুট হলো, চট্টগ্রাম/মংলা বন্দর থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলা (ত্রিপুরা), চট্টগ্রাম/মংলা বন্দর থেকে তামাবিল হয়ে ডাউকি (মেঘালয়), চট্টগ্রাম/মংলা বন্দর থেকে শেওলা হয়ে সুতারকান্দি (আসাম) ও চট্টগ্রাম/মংলা বন্দর থেকে বিবির বাজার হয়ে শ্রীমন্তপুর (ত্রিপুরা) এবং তার বিপরীত।
একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, এই পরীক্ষামূলক পরিবহন কার্যক্রম উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জানা গেছে, ঢাকায় ভারতের মিত্র সরকার থাকা সত্ত্বেও দুই দেশের সম্পর্ক আরো উন্নত করতে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে সে দেশের সরকার বুঝতে পেরেছে। কারণ একই সময়ে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সংযোগ বাড়াতে অনেক বেশি মনোযোগী।
বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যকে ১ জুলাই থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে চীন বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে সচেষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ক’ভিড—১৯ ম’হামা’রি চলাকালীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ন বিষয়ে আলোচনার এক মাসের মধ্যে চীন বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বহুমুখী সংযোগ উভয় দেশের জন্যই সমান লাভজনক প্রস্তাব। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ছিল সংযোগ বা কানেক্টিভিটি সমপ্রসারণ। সংযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রম উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে, ভারত থেকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য দূরত্ব, সময় ও কারিগরি ব্যয় কমবে এবং উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে। বাংলাদেশের পক্ষে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগ জোরদার করা, সরবরাহ শৃঙ্খলের সমন্বয়, অর্থ, পরিবহন, বীমা ইত্যাদি ব্যবসায়িক পরিষেবার প্রসার ও রাজস্ব বাড়বে।
0 মন্তব্যসমূহ