সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

ad

মুরগি চোর এর পেছনের ইতিহাস, পাকসেনা ক্যাম্পের মুরগী ও নারী সাপ্লাইয়ার’

৯০ এর দশকে ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ পত্রিকায় ‘পাক সেনা ক্যাম্পের মুরগী ও নারী সাপ্লাইয়ার' হিসাবে জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদির মুখোশ উন্মোচন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। 

শাহরিয়ার কবির ওই লেখাতে উল্লেখ করেছিলেন পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে মুরগী ও নারী সাপ্লাই দিতো রাজকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। রাজাকার সাঈদীর মওলানার সার্টিফিকেট ভূয়া/জাল, দেশ স্বাধীনের পর সে ভোল পাল্টিয়ে জয়পুরহাটে লুকিয়েছিল, আরো ইত্যাদি তথ্য সহ উল্লেখ ছিল সে লেখাতে। সাঈদীকে সে লেখার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছিল তথ্য গুলো মিথ্যা প্রমাণের জন্য। কিন্তু সাঈদী বা জামায়াতের পক্ষ থেকে সে চ্যালেঞ্জ কখনো গ্রহন করা হয়নি। উল্টো আন্তর্জাতিক যুদ্ধপরাধ ট্রাইবুনালে সাঈদীর বিচার চলাকালে সাক্ষীগণ ‘পাকিস্তানি ক্যাম্পে’ সাঈদীর মুরগী ও নারী  সাপ্লাইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। 

বর্তমানে কারাগারে আটক থাকা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে আটটি অভিযোগ প্রমান হয়েছে তার একটি হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ শেষের দিকে একদিন ১০/১২ জন রাজাকারের বাহিনী নিয়ে পাড়েরহাট বাজারের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়িতে যান রাজাকার সাঈদী। সেখানে গৌরাঙ্গ সাহার ৩ বোন মহামায়া, অন্ন রানী ও কমলা রানীকে আটক করে তারা পিরোজপুরে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যান। সে ক্যাম্পে তিন বোনকে ৩ দিন আটকে রেখে পাকিস্তানি সেনারা সহ সাঈদী ধর্ষণ করে। আরেকটি অভিযোগের স্বাক্ষীরা আদালতে জানায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাঈদী ও তার সহযোগিরা বাজারের বিভিন্ন মনোহরি ও মুদি দোকান লুট করে লঞ্চঘাটে নিজেরা একটি দোকান দিয়েছিল। এসময় তারা মুক্তিযোদ্ধা/হিন্দু বাঙালীদের বাড়িঘরে গিয়ে তাদের টাকা পয়সা ‘গনিমতের মাল’ আখ্যা দিয়ে লুট করতো এবং আসার সময় গবাদী পশু/ হাস মুরগীও নিয়ে এসে লঞ্চঘাটের সেই দোকানে মজুদ করতো। 

মূলত সাঈদীর মুখোশ উন্মোচন করে দেয়ার রাগ ও ক্ষোভ থেকে জামায়াতি ও স্বাধীনতা বিরোধি শক্তি  সম্মিলিত ও পরিকল্পিত ভাবে প্রচার (মিথ্যাচার) চালাতে থাকে 'পাক সেনা ক্যাম্পের মুরগী সাপ্লাইয়ার' সাইদী’র পরিবর্তে শাহরিয়ার কবিরের নাম! যুদ্বাপরাধী ও জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর মালিকানাধীন দিগন্ত টেলিভিশনের কথিত এক টকশো’র একটি আলোচনাকে পুঁজি করে গত এক দশক যাবৎ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এ মিথ্যাচার করে আসছে। অথচ শাহরিয়ার কবির কে ছিলেন তা খুঁজতে  ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র’ পাঠ করলে যে কেউ জানতে পারবে। 

উল্লেখ্য ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ বাংলাদেশের একটি অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক পত্রিকা। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক বাংলা পত্রিকার সহযোগী প্রকাশনা হিসাবে এটি আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে পত্রিকাটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি সহযোগীদের (রাজাকার) এবং যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তখন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় পত্রিকা হিসাবে চালু ছিল। আলমগীর রহমান, শাহরিয়ার কবির, শাহাদাত চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আতিকুর রহমান প্রমুখ সাংবাদিক এই পত্রিকার সাথে জড়িত ছিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ